Law & Justice
  বহু সমস্যার একটি সমাধান!
  11-11-2018

রাহাত হুসাইন

বহু সমস্যার একটি সমাধান! শিরোনাম পড়ে অবাক হলেন নিশ্চয়ই। কি করে একটি সমাধান দিয়ে বহু সমস্যা থেকে মুক্তির পাওয়া যাবে। হ্যাঁ সত্যি বলছি।  একটি মাত্র সমাধান বহু সামাজিক সমস্যার অবসান ঘটাতে পারে।  আর  সেই সমাধানটি হলো বেকারত্বের অবসান ঘটানো। একজন মানুষ যখন তার পেশা হিসেবে কাজ খুঁজে পায় না, তখন তার যে পরিস্থিতির হয় তাই হলো বেকারত্ব।বেকারত্বের কারণে আমাদের সমাজে একাধিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।মানুষের জীবিকা নির্বাহের কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও তার ক্ষুধা থেমে থাকে না। তাই সে ক্ষুধা নিবারনের জন্য বিভিন্ন অসামাজিক কাজ করে থাকে। আবার  à¦à¦•à¦œà¦¨ যুবক পড়ালেখা শেষ করে যখন তার চাহিদা মোতাবেক কোনো চাকরি  না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েন। আবার দেখা গেছে হতাশাগ্রস্থ থেকে অনেকে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। নেশাগ্রস্থ একজন যুবক বিভিন্ন সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। যেমন  চুরি,  ছিনতাই,  খুন - ধর্ষণ, মাদক বেচাকেনার মত একাধিক অপরাধ করে বসে। আবার ধর্মীয় গ্রন্থে বলা হয়েছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।

যখন কোনো ব্যক্তি অলস বা বেকার থাকে তখন তিনি বিভিন্ন দুশ্চিন্তা, অপচিন্তা করে। আবার বেকার লোকজন সংগঠিত হয়ে সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদের মত কাজে যোগদান করে। বেকার সমাজকে পুঁজি করে আমাদের দেশে অপরাজনীতির চর্চাও রয়েছে। একজন শিক্ষার্থী পড়ালেখা শেষ করেই ভালো চাকরির আশা করে। চাকরির ওপর নির্ভর করে তার পরবর্তী জীবন ও গন্তব্য। উপযুক্ত চাকরি না পাওয়ায় অনেকে সময় মত বিয়েও করতে পারে না। আবার বাড়ীতে থাকা বৃদ্ধ মা-বাবার জন্যও কিছু করতে পারে না। একজন বেকার সংসারে অভিশাপ আর বোঝা হয়ে বাঁচে। সংসারে সে অনুগ্রহের পাত্র হয়ে যায়। সমাজও তাকে বিভিন্ন দৃষ্টি কোন থেকে দ্যাখে।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ায় দিন-দিন শিক্ষিত বেকার বাড়ছে। বেকার সমস্যার সমাধান করতে হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করতে হবে। কর্মমুখি ও বাস্তবমুখি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। দেশে এমন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে, যে শিক্ষাগ্রহণ করার পর কোনো শিক্ষার্থীকে চাকরীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।শিক্ষা জীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারবে। এ জন্য সরকারকে বিজ্ঞানমুখি, বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা নীতি প্রনয়ণ করতে হবে। আর শিক্ষিত বেকারদের জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশে বেকার থাকবে এটা কল্পনা করা যায় না। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে বেকারত্ব হ্রাস পারে এটাই স্বাভাবিক। তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে বাংলাদেশে আমূল পরিবর্তন এসেছে। বাঙালির সমাজ জীবনের সর্বত্র লেগেছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে শিক্ষিত বেকার সমস্যার দ্রুত সমাধান করা যায়। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগেরও প্রয়োজন রয়েছে। সরকারি চাকরী আশায় বসে না থেকে নিজ উদ্যোগে ঘরে বনে ইন্টারনেটের সাহায্যে আয় রোজগার করে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছে অনেক তরুণ-তরুণী।

মানুষ এখন অনলাইনে অর্থ আয়ের জন্য নানা কৌশল প্রয়োগ করছে। বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিং, ব্লগিং, ইউটিউব, ডেটা এন্ট্রি, ওয়েবসাইট তৈরি, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, ভার্চ্যুয়াল সহকারী, অনুবাদ, অনলাইন টিউটর হিসেবে কাজ করছে অনেকে। শুধু তাই নয় সামন্য কিছু বিষয় জানা থাকলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করেও প্রচুর টাকা আয় করা যায়। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট এখন আর শুধু বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নয়। এগুলো কাজে লাগিয়ে আয় করতে পারেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে সোশ্যাল মিডিয়া পরিকল্পকদের প্রচুর অর্থ দেওয়া হয় তাদের ব্র্যান্ডের প্রচার করার জন্য। এখন শুধু একটু আড্ডাবাজীতে সময় নষ্ট না করে সময়কে কাজে লাগাতে পারলে বেকারত্ব দ্রুত কমিয়ে আনা সম্ভব। বেকার সমস্যার সমাধান করতে পারলে সব সমস্যা নয়, তবে বহু সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।

 

লেখক: সভাপতি-ন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি

r.hossainnfo@gmail.com