Law & Justice
  আগামী নির্বাচন ও প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন
  01-12-2018

ডা. এস. এ. মালেক

দেখে শুনে মনে হয় যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতাই কার্যকর হবে না। নির্বাচনী আবহাওয়া দেখে অনুমান করা যায় গোটা দেশের মানুষ এখন নির্বাচনমুখী। এরূপ বাস্তবতায় কোন দল, ব্যক্তি, সম্প্রদায় বা সন্ত্রাসী কোন গোষ্ঠী নির্বাচন প্রতিহত করার চেষ্টা করলেও সফল হবে না। তাহলে কি কোন ষড়যন্ত্র মাঠে কার্যকর নেই? নিশ্চয়ই আছে ।

নির্বাচনে যারা বিশ্বাস করে না, তারা সবসময় নির্বাচনের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালাবে, একটা সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক, একটা প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ ও সরকার হোক, এটা তারাই চায় না, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না। এমনও হতে পারে যে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলও নির্বাচনে বিরোধীতা করছে। ঐ বিরোধীতা দৃশ্যমান নয়।

মনে হবে তারা নির্বাচনমুখী। তাদের মুখের ভাষাও নির্বাচনমুখী কিন্তু তলে তলে এমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত যেন নির্বাচন প্রক্রিয়াই তারা বাধা সৃষ্টি করবে। নির্বাচনে পরাজয় হলে রায় মেনে নেবে না। নির্বাচনোত্তর গোলমাল সৃষ্টি করে নির্বাচনের রায় ভন্ডুল করবে। যারা নির্বাচনের রায় মেনে নিতে রাজি নয় পরাজয় নামক শব্দটি যাদের রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্য নয়, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এটা তাদের প্রত্যাশা নয়। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সমসাময়িক বিষয়গুলো সম্পর্কে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী নির্বাচন সম্পর্কে যেমন জনগণের একটা বিতশ্রদ্ধা ছিল; আগামী নির্বাচনে ঐরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টির কোন সম্ভাবনা নেই। ৫ই জানুয়ারী ঐ নির্বাচনে বিরোধী দল যারা প্রদত্ত ভোটের ৩০%-৩২% পেয়ে থাকে; তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কারণে উপস্থিত ভোট পড়েছিল ৪২ ভাগ। কিন্তু এবারের বাস্তবতা সেরূপ নয়। মূল বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ না নিলেও এবার ৬০-৬৫% লোক ভোট দিতো। আর বিএনপি ও অন্যান্য দল সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এবার প্রদত্ত ভোটারের সংখ্যা ৭০ শতাংশ উন্নীত হতে পারে। তফশিল ঘোষিত হয়েছে। বিভিন্ন দল প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন।

 à¦œà§‹à¦Ÿ সমূহের সিটের ভাগাভাগি করেছে। ইসি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। নির্বাচনের সহজাত প্রক্রিয়ায় যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তার সব কিছুই ইসি গ্রহণ করেছেন। এতদ্বসত্ত্বেও মাঝে মাঝে কিছু বেফাস কথা শোনা যাচ্ছে। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন তফশিল ঘোষণার পর দাবী জানিয়েছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনের সংস্কার দরকার। তার এই দাবী সার্বিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিধ্বস্ত করার আভাস।

সময় এসেছে নির্বাচনে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কেন্দ্রে পাঠাবার। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সার্বিক প্রস্তুতির পর এখন যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হয় তাহলে বাস্তব অবস্থাটা এখন দাঁড়াবে কোথায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, তা কি নতুন নির্বাচন কমিশন এসে পরিবর্তন করতে পারবেন? আর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপর যদি আস্থা না থাকে, তা হলে নির্বাচন হবে কিভাবে।

দিন যতো এগোচ্ছে প্লেন লেভেল ফিল্ড তৈরি করা হচ্ছে। এমন সব নতুন দিক নির্দেশনা আসছে যে কারও পক্ষেই নির্বাচনে কারচুপি করা সম্ভব হবে না। নির্বাচন কমিশন সবকিছু ভালভাবে গুছিয়ে নিচ্ছেন। যাতে কোথাও কোন গাফিলতি না থাকে। এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অপসারণের দাবী তুলে ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন নির্বাচনকে ভন্ডুল করার প্রক্রিয়া শুরু করলেন কি না, কে জানে? ড. কামাল হোসেন একজন বিজ্ঞ আইনবিদ, সাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় তার বিশেষ ধারণা আছে। তফশিল ঘোষণার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অপসারণের দাবী তুলে তিনি কি সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকেই অগ্রাহ্য করতে চান? দেশের সুধী মহলে এতে এক মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

ড. কামাল হোসেনের মতো ব্যক্তি এ ধরনের দাবী করবেন এটা কেউ মনে করেনি। বিএনপি তো প্রথম থেকেই বলে আসছে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়। এটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। একটি দলের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে দেশের জনগণের সার্বিকভাবে প্রত্যাশিত নির্বাচন বানচাল করা যায় না। তাছাড়া দেশের সবকটি সম্প্রদায়, গোষ্ঠী ও ভোটাররা যখন নির্বাচনমুখী তখন নির্বাচন ভন্ডুল হতে পারে এরূপ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্য ড. কামাল হোসেনের ঐ ধরনের বক্তব্য দেওয়ার পর তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করবেন বলে মনে হয় না। তাই নির্বাচন যে হতে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাদের ধারণা বাংলাদেশ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একটা অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান ও বর্তমান নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সক্ষম। আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গিও প্রায় একইরূপ। আর ভারতও বলেই দিয়েছে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। একদিকে মানুষ নির্বাচন চায় অপরদিকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল মনে করছে যে নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল রয়েছে। তাই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালে প্রতিরোধ সৃষ্টির অপচেষ্টা ও নির্বাচনের রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র অনুপস্থিত তা বলা ঠিক হবে না।

বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী চক্র সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক এটা চায় না। তাদের অনেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানকালে তারা কি ধরনের কর্মকান্ড চালাবে তা নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ। তাছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে এমন কিছু গোয়েন্দা রয়েছে, যারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এটা চায় না। গণতন্ত্র স্থিতিশীল থাকুক তাও তারা চায় না। পাকিস্তান তো বাংলাদেশে অ্যাম্বাসীকে গোয়েন্দা হেডকোয়ার্টার হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৃতিত্ব যারা ভালো চোখে দেখে না, তারাই সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এটা চায় না। তারা নির্বাচনকালে এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, যা নির্বাচনের রায়কে বিতর্কিত করতে পারে। অবশ্য সরকার ও প্রশাসন এ ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। তারপরেও সন্দেহ থেকেই যায়। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ততটা স্বাভাবিক নয়। সর্বাত্মক অংশগ্রহণমূলক একটা নির্বাচন দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।

এবারের নির্বাচন এরূপ একটা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে বলে অনেকেই মনে করছেন। কোন কারণে এই নির্বাচন ব্যাহত হলে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাই যে প্রতিরোধের সম্মুখীন হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। যারা গণতন্ত্র প্রত্যাশী, তাদের উচিত সর্বাত্মকভাবে নির্বাচন সফল করার চেষ্টা চালানো।

 

লেখক: বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও কলামিষ্ট